১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাঙালির হৃদয় থেকে তার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। এখনো প্রেরণা হয়ে পথ দেখাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। একজন মানুষ মৃত্যুর পরও কতটা শক্তিশালী, একটা জাতির কতটা জুড়ে থাকতে পারে তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সেই শোকাবহ আগস্টের চতুর্থ দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ৪ আগস্ট ছিল সোমবার। এদিন সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তান ফেরত মেজর জেনারেল মাজেদুল হক। এদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় মোয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী, সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় কৃষক লীগ নেতা রহমত আলী এমপি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি মোশতাকের ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ কর্মসূচির কর্ণধার ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে মস্কোতে নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত শামসুল হক সাক্ষাৎ করেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে।
শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। ছাত্র অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সংগ্রামের মধ্যেই তিনি বড় হয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শুরু করেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত প্রিয় দেশ মাতৃকাকে সুনিপুণ হাতে গড়ে তোলার কাজ। পাকিস্তানের বিরোধিতা সত্ত্বেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সারা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সীমিত শক্তির মধ্যে বঙ্গবন্ধু গড়ে তোলেন বাংলাদেশের নিজস্ব সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী। প্রণয়ন করেন সংবিধান। এছাড়া এই অল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু ভারতীয় সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা, জাতীয়করণ কর্মসূচি গ্রহণ, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন নানা যুগান্তকারী কাজ বাস্তবায়ন করেন।