লোৎসে চূড়ায় বাবর আলীসংগৃহীত
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশে ফিরেছেন বাবর আলী। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরেছেন ইতিহাসে নাম লেখানো এই পর্বতারোহী।
দেশে আসার পর মুঠোফোনে বাবর আলী প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল এভারেস্ট ও লোৎসের চূড়ায় পৌঁছানোর পর আবার নিরাপদে দেশে ফিরে আসব। সেটিই হলো। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ, প্রচেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা—সবই পূরণ হলো। দেশের মানুষ যেভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে, এতে আমি দারুণ আনন্দিত।’
এভারেস্ট ও লোৎসে পর্বতশৃঙ্গে আহরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন গত ১ এপ্রিল। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান লুকলা বিমানবন্দরে। এরপর পথচলা শুরু করেন এভারেস্ট বেসক্যাম্পের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছান ১০ এপ্রিল। পরবর্তী সময়ে ২৬ এপ্রিল বেসক্যাম্পে থেকে এভারেস্টের ক্যাম্প ২ পর্যন্ত ঘুরে এসে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব সমাপ্ত করেন। এরপর অনুকূল আবহাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় বাবরকে। ১৪ মে মাঝরাতে বেসক্যাম্পে থেকে বাবরের যাত্রা শুরু হয় চূড়া অভিমুখে। ১৫ মে সকালে পৌঁছে যান ক্যাম্প ২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর উঠে যান ক্যাম্প ৩-এ।
সেখান থেকে ১৮ মে পৌঁছান ক্যাম্প ৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ‘ডেথ জোন’। ১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা। ১৯ মে ভোরের প্রথম আলোয় ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণের দুই দিন পর লোৎসে পর্বতের শীর্ষ (৮ হাজার ৫১৬ মিটার) ওঠেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী। ২১ মে নেপাল সময় সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৬টা ৫ মিনিট) বাবর লোৎসে পর্বতচূড়ায় পা রাখেন। নেপালের স্নোয়ি হরাইজন নামের ট্রেকিং ও পর্বতাভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানে যান বাবর।
যাত্রার পরতে পরতে চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানালেন বাবর আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পা হরকালেই বিপদ, এ সত্য জেনেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম। যাত্রার পরতে পরতে ছিল অনিশ্চয়তা। তবে সাহস রেখেছিলাম মনে। শেষ পর্যন্ত সফলভাবে শেষ করে আসতে পেরেছি। এতেই খুশি। এখন নিজের অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে বিনিময় করব।’
বাবরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের প্রধান অভিযান সমন্বয়ক ফরহান জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবর নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছে। এতে সবাই দারুণ খুশি। বাবরের এই সাফল্য শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি পুরো বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের বিষয়।’
ক্লাবের পক্ষ থেকে আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাবর তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরবেন। এ ছাড়া সাফল্য উদ্যাপন করতে ২ জুন চট্টগ্রাম নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত সাইকেল রাইড থাকবে।