টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা আছে, যারা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন, সরকারের উচিত এসব বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেয়া।’
কর্তৃত্ববাদ পতনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকারে ভারত ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, এ কারণে অপতৎপরতার ফলে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনে সরকার ও দেশের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে সোমবার ‘নতুন বাংলাদেশ: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিন’ নিয়ে টিআইবির পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম।
টিআইবি পর্যবেক্ষণে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরও প্রতিটি ক্ষেত্রে দখল আর আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান। পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির ৪২২ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার দাবি প্রশ্নবিদ্ধ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
টিআইবির পর্যবেক্ষণ অনুসারে, রাষ্ট্র সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার বহুমাত্রিক ভিত্তি ও অংশীজনের ভূমিকা রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অন্যদিকে চলার পথে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বাস্তবায়নে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কৌশল ও রোডম্যাপ প্রণয়নের সুযোগ নেয়া হয়নি, যা এখনও অনুপস্থিত।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও এই প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাডহক প্রবণতা, উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও দায়িত্ব বণ্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়েছে।
প্রশাসন পরিচালনায় সরকারের দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারে দায়িত্বশীলদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরিবর্তন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি এখনও চলমান। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও দলীয়করণের পরিবর্তে আরেকটি গোষ্ঠীর প্রতিস্থাপন/হাতবদল হয়েছে বলে লক্ষ্য করা যায়।
সংস্থাটির গবেষণায় বলা হয়, বিএনপির ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক উদ্যোগ অনুপস্থিত রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলছে- দলটির মধ্যে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি বিদ্যমান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন খাতে দলটির দখল ও আধিপত্য বিস্তার ছিল।
টিআইবির তথ্য বলছে, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের পক্ষ থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেয়ার প্রশ্নে ধৈর্য্যের ঘাটতি লক্ষণীয়। গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও হুমকি-হামলাসহ কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার তৎপরতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে জেন্ডার, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
কর্তৃত্ববাদ পতনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকারে ভারত ব্যর্থ হয়েছে। তার কারণে অপতৎপরতার ফলে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনে সরকার ও দেশের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ ও প্রভাব দৃশ্যমান। অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে জেন্ডার, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে, যা বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা আছে, যারা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন, সরকারের উচিত এসব বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেয়া।’