লিভারের স্বল্পমেয়াদি বা তীব্র সংক্রমণে তেমন কোনো উপসর্গ না–ও থাকতে পারে। জন্ডিস, খাবারে অরুচি, জ্বর, বমিভাব বা বমি, দুর্বলতা, জয়েন্টে ব্যথা, ত্বক ও চোখ হলুদ বর্ণ, ফ্যাকাশে বর্ণের পায়খানা, গাঢ় বর্ণের প্রস্রাব ইত্যাদি উপসর্গ থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ খুব কম বা কোনো উপসর্গই থাকে না বলে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে, রক্তদান বা কোনো রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে হয়তো জানতে পারে তার এই ভাইরাস আছে। এই ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি কাউকে রক্ত দিতে বা অঙ্গ দান করতে পারবে না।
যারা শৈশবে হেপাটাইটিস বি–তে আক্রান্ত হয়, তাদের রক্তে সুপ্ত অবস্থায় এই ভাইরাস দীর্ঘকাল রয়ে যায় এবং সঠিক চিকিৎসা পায় না বলে তাদেরই সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ (লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসারসহ নানা রকম জটিলতা) হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
কোনো ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যদের, বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোন ও সন্তানদের শরীরে এই ভাইরাস আছে কি না, সেটাও জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ, শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি না থাকলে টিকা দিয়ে তারা এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
গর্ভবতী নারী যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে গর্ভকালীন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসায় থাকতে হবে। সন্তান প্রসব অবশ্যই হাসপাতালে করতে হবে। সন্তান জন্মানোর পরই সন্তানকে বি ভাইরাস প্রতিরোধে দ্রুত টিকা ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে দিতে হবে।
প্রতিরোধ
বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচিতে এই ভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে টিকা নেওয়া হয়নি, এমন প্রাপ্তবয়স্কদের অবশ্যই আলাদাভাবে টিকা কিনে নিতে হবে।
উপসর্গ না থাকলেও হেপাটাইটিস বি শরীরে আছে কি না, রক্ত পরীক্ষা করে তা জেনে নেওয়া উচিত। পজিটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে আর নেগেটিভ হলে টিকা নিতে হবে।
তবে টিকা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে হবে আগে কখনো এই ভাইরাস শরীরে সংক্রমণ করেছে কি না এবং শরীরে এরই মধ্যে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে আছে কি না।
কীভাবে ছড়ায়
হেপাটাইটিস বি–তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত সঞ্চালন ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। অন্যান্য দেহ তরল (লালা, সিমেন, ভ্যাজাইনাল ফ্লুইড), হেপাটাইটিস বি–তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবকালে সন্তানের শরীরে, জীবাণুযুক্ত টুথব্রাশ বা রেজর থেকে, দাঁতের অপারেশনের সরঞ্জাম, জীবাণুযুক্ত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত সংস্পর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে থাকে।
চিকিৎসা
দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসায় আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি কার্যকর অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ আছে, যা ভাইরাল লোড কমিয়ে লিভার সিরোসিস প্রতিরোধে সক্ষম। দীর্ঘমেয়াদি এই চিকিৎসায় শুধু ৫ থেকে ১০ শতাংশ HBsAg নেগেটিভ হতে পারে।
তবে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত হলে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কোনো অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ছাড়াই HBsAg নেগেটিভ হয়ে যায়।
হেপাটাইটিস বি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও নিয়মিত চিকিৎসায় লিভারকে সুস্থ রাখা সম্ভব।