শ্রীপুর (গাজীপুর) ছবি : সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, হামলা পাল্টা হামলায় আহত অন্তত ২০ জন। এ সময় পুলিশ বক্সে ও পুলিশের তিনটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শনিবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহসড়কের যান চলাচল। দুপুর ৩টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিল। আটকে পড়া যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে মাওনা চৌরাস্তায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয় বলে অভিযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। এদের মধ্যে ৬ জনকে শ্রীপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অনেক আহতদের উদ্ধার করে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও পুলিশ বক্সে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
তা ছাড়া রাস্তার ওপরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পোস্টার ফেস্টুন ব্যানার বাঁশ একত্রে রাস্তার ওপর জমায়েত করে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ব্যারিকেডের মাধ্যমে গাড়ি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে। এ সময় উভয় দিকে তীব্র যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ হয়।
শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় থেকে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের উড়াল সড়কের মুখ পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সড়কের নিচে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ প্রথম থেকেই পিছু হটলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে পিছু হটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কয়েক প্লাটুন পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে মাওনা চৌরাস্তা ভাই ভাই সিটি মার্কেটে অবরুদ্ধ করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশের ৩টি গাড়িতে ও ৩টি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মার্কেটে পার্কিং থাকা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশও পিছু হটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। নিরাপত্তায় সকাল থেকেই পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা। পরে তিনি কৌশলে সটকে পড়েন।
মাওনা চৌরাস্তার বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের এখানে প্রায় ২৪ জন আহত রোগী এসেছিল, তাদের অধিকাংশই রাবার বুলেটে আহত। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তিনি লেপ–তোশক তৈরির কাজ করতেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, পুলিশ প্রথম থেকেই তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছে। তারা কারো ওপর চড়াও হয়নি। এরপর আন্দোলনকারীরা তাদের ধাওয়া করে পুলিশের গাড়িতে ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। পুলিশও আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেন। তবে এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছে তা জানা যায়নি। এ রিপোর্ট লেখার সময় উভয় পক্ষ স্ব স্ব স্থানে সতর্কতার সঙ্গে অবস্থান করছেন। তবে অতি উৎসাহীদের কাউকে দেখা যায়নি।