ফিলিস্তিনের গাজায় ছয় মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। এদিকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বাসাবাড়িতে ফিরতে দিতে এবং সেনা প্রত্যাহারে ইসরায়েল রাজি না হওয়ায় এখনো যুদ্ধবিরতির আলোচনা ঝুলে আছে।
ইসরায়েলের হামলায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬২ জন নিহত হয়েছেন বলে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৩৩ হাজার ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। নিহত ব্যক্তিদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯১ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে আহত মানুষের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৬৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া আরও আট হাজার নিখোঁজ রয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত বাড়িঘর ও স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে তাঁদের মরদেহ পড়ে আছে। অব্যাহত হামলার কারণে এসব মরদেহ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারে এখন জোর দিচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি নেই
গাজায় ইসরায়েলি হামলার ছয় মাস পরও যুদ্ধ বন্ধের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মিসরের কায়রোয় যান ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। তবে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
আল-কুদস দিবসকে সামনে রেখে গত বুধবার এক ভাষণে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে অনড়—স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে শত্রুদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, সব বাস্তুচ্যুত মানুষকে তাদের বাসাবাড়িতে ফিরতে দেওয়া, গাজার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দেওয়া, গাজার পুনর্গঠন, অবরোধ প্রত্যাহার এবং সম্মানজনক বন্দী বিনিময় চুক্তি।’
তবে জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে মাত্র এক মাসের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার রাফা এলাকায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বর্তমানে সেখানে বাস্তুচ্যুত ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন।
ত্রাণকর্মী হত্যার বিচার দাবি
ইসরায়েলের হামলায় ছয় বিদেশিসহ সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচারের দাবি জোরদার হচ্ছে। গত সোমবার গাজার দেইর আল-বালাহর উপকূলীয় এলাকায় দাতব্য প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) গাড়িবহরে হামলায় তাঁরা নিহত হন।
এক বিবৃতিতে ডব্লিউসিকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এই হামলার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এটা ছিল সামরিক বাহিনীর হামলা এবং একাধিকবার এ হামলা চালানো হয়েছিল। ডব্লিউসিকের তিনটি গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা জোসে আন্দ্রেস বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী পদ্ধতিগতভাবে এ হামলা চালায় এবং একেকটি গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। এখানে দুর্ভাগ্যবশত কিছু হয়নি এবং বিষয়টি এমন ছিল না যে ভুল জায়গায় বোমা ফেলা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে গতকাল ফোনালাপের কথা রয়েছে। সেখানে ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লয়েড অস্টিনও ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে এ ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।