সাধারণ গৃহিণী থেকে ভোটের মাঠ জয় করে ঝিকরগাছা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এখন তাঁর ভাবনাজুড়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং সমাজের নির্যাতিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করা। তাঁর নাম জেসমিন সুলতানা।
এমন নয় যে নির্বাচিত হয়েই জেসমিন সুলতানা নারীদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন; বরং জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার আগেও সংসার সামলে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য এলাকার নারীদের নিয়ে দল বেঁধে হাতের কাজ করতেন। সোচ্চার ছিলেন বাল্যবিবাহ রোধ কিংবা নারী নির্যাতনসহ নানা বিষয়ের বিরুদ্ধে। বাল্যবিবাহ বন্ধের চেষ্টাও করেছেন। নির্যাতিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের পক্ষে কথা বলেছেন সব সময়। এসব কাজের সুবাদে এলাকায় তাঁর পরিচিতি বাড়ে। ফলে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ঝিকরগাছা পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়ে জিতে যান জেসমিন। শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভেতরে থেকে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা। দুই বছর নারী কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনের পর উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন তিনি। রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জেসমিন।
খুলনা জেলার দৌলতপুরের শেখ ইউসুফ আলী ও জবেদা খাতুনের মেয়ে জেসমিন সুলতানা। ২০০৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঝিকরগাছা উপজেলার কীর্তিপুরের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এরপর আর লেখাপড়া হয়নি। স্বামী-সংসার নিয়েই কাটাতে হয়েছে সময়। হয়েছেন দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তানের মা। নিতান্তই সাদামাটা এই পরিচয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তিনি। ৮ জুলাই জেসমিন সুলতানা দায়িত্ব নেন উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে।
জেসমিন সুলতানা জানান, এক বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেন তিনি, যেখানে নারী-পুরুষ সমানভাবে বিকাশের সুযোগ পাবে। সে লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করে যেতে চান তিনি। গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্য জেসমিনের। নিজের পদে থেকে, পদপদবির সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়েই বাল্যবিবাহ, যৌতুকসহ যাবতীয় অসংগতির বিরুদ্ধে গ্রামের নারীদের সোচ্চার এবং তাঁদের সন্তানদের স্কুলগামী করতে উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছেন জেসমিন সুলতানা।