সিয়াম আহমেদ, সাফা কবির বা মনোজ প্রামাণিক—সিনেমা, টিভি নাটক বা ওয়েব সিরিজের কল্যাণে কেউই দর্শকের কাছে অচেনা নন। পর্দায় বেশির ভাগ সময়ই তাঁদের রোমান্টিক চরিত্রে দেখা যায়। তবে নতুন সিরিজ ‘টিকিট’-এ সবাই হাজির হয়েছেন ভিন্নভাবে। ভিকি জাহেদের সিরিজটিতে তাঁদের ভিন্নধর্মী চরিত্রে ভিন্ন লুক মুগ্ধ করেছে অনেক দর্শককে।
ভিকি জাহেদ মূলত থ্রিলার বানান, ‘পুনর্জন্ম’ ইউনিভার্স দিয়ে দেশ-বিদেশের দর্শকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। পরিচালকের প্রায় সব কাজেই রহস্যের ছোঁয়া থাকে। ‘টিকিট’ও ব্যতিক্রম নয়। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের গল্প ‘লটারি’ অবলম্বনে নির্মিত সিরিজটিতেও রহস্যের ছোঁয়া আছে। তবে সিরিজটিকে বেশি ফেলা যায় ডার্ক হিউমার ঘরানায়। মুক্তির আগেই নির্মাতা জানিয়েছেন, অভিনয়শিল্পীদের ভিন্নভাবে হাজির করা থেকে শুরু নির্মাণ—সব ক্ষেত্রেই ‘টিকিট’ আলাদা। মুক্তির পর তা কতটা করতে পারলেন তিনি?
চরকি অরজিনাল ‘টিকিট’-এর তিন প্রাণভোমরা সিয়াম আহমেদ, সাফা কবির ও মনোজ প্রামাণিক। শুরুটা করা যাক সিয়ামকে দিয়ে।
গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি থ্রিলার আর অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমায় অভিনয় করলেও জাতীয় পুরস্কারজয়ী এ অভিনেতা মূলত পর্দার ‘রোমান্টিক বয়’ হিসেবেই পরিচিত। তবে এ সিরিজের সিয়ামকে দেখে চমকে যাবেন যে কেউ। চোখে চশমা, নার্ভাস আর দ্বিধায় ভোগা এক তরুণ ‘সালেক’-এর চরিত্রে তাঁকে ঠিক যেন মেলানো যায় না। কিন্তু পর্দায় ‘সালেক’ চরিত্র হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন সিয়াম। এ জন্য নিজের ওজন বাড়িয়েছেন, বাচনভঙ্গি থেকে শরীরী ভাষারও পরিবর্তন করেছেন।
সিনেমা সমালোচনা নিয়ে কলকাতার জনপ্রিয় দুই ইউটিউব চ্যানেল ‘রুপমস রিভিউ’ ও ‘আর্টিস্টিক সেভেনথ সেন্স’-এরও মত, এ সিরিজের অন্যতম ইতিবাচক দিক সিয়াম আহমেদের অভিনয়। ফেসবুক গ্রুপ বাংলা চলচ্চিত্র-এ তানিয়া তাসনিম নামের এক দর্শক সিরিজটিতে সিয়ামের অভিনয় নিয়ে লিখেছেন, ‘সিয়াম আহমেদ দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স করেছেন। তাঁর সংলাপ বলা, চেহারার ভেতর রহস্য—এককথায় অসাধারণ।’
আরেকটি চমক ছিলেন সাফা কবির। ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বরাবরই রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিত। সেখানে এ সিরিজে তিনি হাজির হয়েছেন রহস্যময়ী এক নারীর চরিত্রে, যাঁর আবেদনময়ী রূপে মুগ্ধ হন না, এমন পুরুষ কমই আছেন। এ চরিত্রে অভিনয় সাফার জন্যও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। অভিনেত্রীর ভাষ্যে, ‘আমার বেড়ে ওঠার সঙ্গে সিরিজের চরিত্রটির আকাশ-পাতাল তফাত। এ কারণে চ্যালেঞ্জ আরও বেশি ছিল।’
একই কথা আরও বেশি প্রযোজ্য মনোজ প্রামাণিকের ক্ষেত্রে। পর্দায় মনোজ মানেই যেন ‘প্রেমিক’ আর ‘ভদ্র ছেলে’র চরিত্রে। কিন্তু ‘টিকিট’-এ নিজেকে ভেঙেছেন মনোজ, তাঁর কথা বলা, লুক আর সংলাপ বলা—সবকিছুতেই ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছেন দর্শকেরা। বিশেষ করে সিয়াম ও মনোজের পাল্লা দিয়ে অভিনয় উপভোগ করেছেন দর্শকেরা। সাফার মতো মনোজও জানান, বাস্তবের মনোজ আর এ সিরিজের মনোজ, দুই মেরুর মানুষ। পর্দায় নানা সময়ে নানা চরিত্রে হাজির হতে হয় শিল্পীদের, এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাই মনোজের চেয়ে বেশি খুশি কে-ইবা হয়েছেন।
সিরিজটিতে চেনা শিল্পীদের ‘অচেনা’ রূপে হাজির করার জন্য পরিচালক ভিকি জাহেদের যেমন ধন্যবাদ প্রাপ্য, তেমনি প্রশংসা করতে হয় মেকআপ আর্টিস্ট খোকন মোল্লার। ‘টিকিট’ নিয়ে অন্তর্জালে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, কারও সিরিজটি বেশ ভালো লেগেছে, কারও মোটামুটি; তবে যেভাবে সিরিজটি শেষ হয়েছে, তা স্পর্শ করে গেছে সবাইকে।