27 C
Dhaka
শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪

ছেলেধরা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সেবার দেশময় রটে গেল যে, তিনটি শিশু বলি না দিলে রূপনারায়ণের উপর রেলের পুল কিছুতেই বাঁধা যাচ্ছে না। দু’টি ছেলেকে জ্যান্ত থামের নীচে পোঁতা হয়ে গেছে, বাকী শুধু একটি। একটি সংগ্রহ হলেই পুল তৈরী হয়ে যায়। শোনা গেল, রেল-কোম্পানির নিযুক্ত ছেলেধরারা শহরে ও গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্চে। তারা কখন এবং কোথায় এসে হাজির হবে, কেউ বলতে পারে না। তাদের কারও পোশাক ভিখিরীর, কারও বা সাধু-সন্ন্যাসীর, কেউ বা বেড়ায় লাঠিহাতে ডাকাতের মত—এ জনশ্রুতি পুরানো, সুতরাং কাছাকাছি পল্লীবাসীর ভয়ের ও সন্দেহের সীমা রহিল না যে এবার হয়ত তাদের পালা, তাদের ছেলেপুলেই হয়ত পুলের তলায় পোঁতা যাবে।

কারও মনে শান্তি নেই, সব বাড়িতেই কেমন একটা ছমছম ভাব। আবার তার উপরে আছে খবরের কাগজের খবর। কলকাতায় যারা চাকরি করে তারা এসে জানায়, সেদিন বউবাজারে একটা ছেলেধরা ধরা পড়েচে, কাল কড়েয়ায় আর একটা লোককে হাতে-নাতে ধরা গেছে, সে ছেলে ধরে ঝুলিতে পুরছিল। এমনি কত খবর! কলকাতার অলিতে গলিতে সন্দেহক্রমে কত নিরীহের প্রতি কত অত্যাচারের খবর লোকের মুখে মুখে আমাদের দেশে এসে পৌঁছুল। এমনি যখন অবস্থা তখন আমাদের দেশেও হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটে গেল। সেইটে বলি।

পথের অদূরে একটা বাগানের মধ্যে বাস করেন বৃদ্ধ মুখুজ্যে-দম্পতি। ছেলেপুলে নেই, কিন্তু সংসারে ও সাংসারিক সকল ব্যাপারে আসক্তি আঠারো আনা। ভাইপোকে আলাদা করে দিয়েছেন, কিন্তু আর কিছুই দেননি। দেবেন এ-কল্পনাও তাঁদের নেই। সে এসে মাঝে মাঝে দাবী করে ঘটি-বাটি-তৈজসপত্র; খুড়ী চেঁচিয়ে হাট বাঁধিয়ে দিয়ে লোকজন জড়ো করেন, বলেন হীরু আমাদের মারতে এসেছিল। হীরু বলে, সেই ভাল—মেরেই একদিন সমস্ত আদায় করবো।

এমনি করে দিন যায়।

সেদিন সকালে ঝগড়ার চূড়ান্ত হয়ে গেল। হীরু উঠানে দাঁড়িয়ে বললে, শেষ বেলা বলচি খুড়ো, আমার ন্যায্য পাওনা দেবে কিনা বল?

খুড়ো বললেন, তোর কিছুই নেই।

নেই?

না।

আদায় করে আমি ছাড়ব।

খুড়ী রান্নাঘরে কাজে ছিলেন, বেরিয়ে এসে বললেন, তা হলে যা তোর বাবাকে ডেকে আন্‌ গে।

হীরু বললে, আমার বাবা স্বর্গে গেছেন, তিনি আসতে পারবেন না,—আমি গিয়ে তোমাদের বাবাদের ডেকে আনব। তাদের কেউ হয়তো বেঁচে আছে—তারা এসে চুলচিরে আমার বখ্‌রা ভাগ করে দেবে।

তারপর মিনিট-দুয়েক ধরে উভয়ে পক্ষে যে-ভাষা চলল তা লেখা চলে না।

যাবার আগে হীরু বলে গেল, আজই এর একটা হেস্তনেস্ত করে তবে ছাড়ব। এই তোমাদের বলে গেলুম। সাবধান!

রান্নাঘর থেকে খুড়ী বললেন, তোর ভারী ক্ষমতা! যা পারিস কর গে।

হীরু এসে হাজির হলো রাইপুরে। ঘর-কয়েক গরীব মুসলমানদের পল্লী। মহরমের দিনে বড় বড় লাঠি ঘুরিয়া তারা তাজিয়া বার করে। লাঠি তেলে পাকানো, গাঁটে গাঁটে পেতল বাঁধানো। এই থেকে অনেকের ধারণা তাদের মত লাঠি-খেলোয়াড় এ অঞ্চলে মেলে না। তারা পারে না এমন কাজ নেই। শুধু পুলিশের ভয়ে শান্ত হয়ে থাকে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ সংবাদ

তারাও কি হিমায়িত হতে পারে

0
শিল্পীর চোখে কৃষ্ণগহ্বররয়টার্স নতুন এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল আসলে হিমায়িত তারা হতে পারে। এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ব্ল্যাকহোল তেজস্ক্রিয়া বিষয়ে একটি প্যারাডক্সের...

গৌরীপুরের সিধলং বিলে লাল শাপলার রাজত্ব

0
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সিধলং বিল ‘শাপলার রাজ্য’ নামে পরিচিত। গৌরীপুরের সিধলা ইউনিয়নের বিলটিকে ‘সিধলা বিল’ নামেও চেনে লোকে। বর্ষায় এই বিল সেজে ওঠে লাল–সাদা শাপলায়।...

“দ্বিধার প্রতিধ্বনি”

0
নিশ্বাসেরও কোনো ভরসা নেই, মুহূর্তে থেমে যাবে বোধহয়। চঞ্চলতার মাঝে লুকিয়ে থাকে, জীবন যেন মিছেই খেলায় রত। বিশ্বাসেরও বিশ্বাস নেই, মানুষের মনে দ্বিধা খেলে। কেউ পাশে থাকে, আবার কেউ মুছে যায়...

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হোক

0
ফাইল ছবি সারা দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো...

ট্রেন্ড পূজার আয়োজনে হৈমর শাড়ি

0
দরজায় কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে এসেছে বর্ণিল ও আকর্ষণীয় উৎসবের পোশাক। দেশীয় অনলাইনভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড হৈমর পূজার কালেকশনে এ...