26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫

জসীমউদ্দীনের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ

বিভাজন-পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে যে মূল্য দিতে হয়েছে বিশ্বের খুব কম জাতিগোষ্ঠীই সেই মূল্য দিয়েছে। একাত্তরে এদেশের সর্বস্তরের মানুষের ওপর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের যে ভয়, বীভৎসতা ও নারকীয়তা নেমে এসেছে তা বর্ণনাতীত।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভাষা আন্দোলনের চেতনারই সম্প্রসারণ। ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বা ব্যবধান হলো স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনে বিশ্বাস। এ কারণে দেশভাগের পর পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে যে মূল্য দিতে হয়েছে তা বিশ্বের খুব কম জাতিগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য। একাত্তরে এদেশের সর্বস্তরের মানুষের ওপর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের যে ভয়, বীভৎসতা ও নারকীয়তা নেমে এসেছে তা বর্ণনাতীত।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জীবনের বিবর্ণ ও প্রতিকূল বাস্তবতাকে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক নানা ও বহু-রৈখিক উপায়ে রূপ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও এই প্রচেষ্টা চলছে। কালের ব্যবধানে সমগ্র বাঙালি জীবনের অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগ ও অর্জনকে নির্মাণ ও বিনির্মাণ করা সহজ নয়, জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নে সহজ। মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে শত্রুর বর্বরতা ও নতুন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার বিশ্বাস ও চেতনার প্রত্যক্ষ শিল্পরূপ তৈরি করা কঠিন। আর শিল্পকলার সবচেয়ে কঠিন কাজে সাহসী ভূমিকা পালনকারী কবিদের মধ্যে জসীমউদ্দীনই সবচেয়ে প্রবীণ।

একাত্তরের ভয়াবহ দিনগুলোতে জসীমউদ্দীন স্বদেশে থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত রক্তে স্নান দেশের জন্য কবিতা লেখেন। কবিতা তার কাছে অস্ত্র ছিল। তখন তার কবিতার প্রতিটি শব্দ শত্রুর বিরুদ্ধে ছোড়া বুলেটের মতো। তারপর তার কবিতার প্রতিটি লাইন বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব-জনমত সৃষ্টির এক কঠিন ও কঠিন প্রক্রিয়ার মতো। জসীমউদ্দীন মূলত জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছেন, যুদ্ধরত জাতির প্রতি বিশ্ব বিবেকের সহানুভূতি এবং স্বদেশের সমৃদ্ধ চেতনা তাঁর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কবিতায় তুলে ধরেছেন। তুজম্বর আলী ছদ্মনামে ভারত, রাশিয়া ও আমেরিকায় কবিতা পাঠান। আমেরিকা ও রাশিয়ায় বহু কবিতা অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে। একারণে মুক্তিযুদ্ধে জসীমউদ্দীনের কবিতা শুধু শিল্প মাধ্যমই নয়, কাব্যচর্চার চেয়েও বড় কিছু। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সরাসরি জড়িত জসীমউদ্দীনের সেসব কবিতার মূল্য ঐতিহাসিক।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ জসীমউদ্দীনের প্রথম কবিতা ‘বঙ্গবন্ধু’। 16 মার্চ 1971 তারিখে লেখা। প্রকৃতপক্ষে ৭ই মার্চের পর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একত্রিত হওয়ার ঘটনা, বাঙালির হাজার বছরের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তির দূত হিসেবে অধিষ্ঠিত শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙালির মুকুটহীন মহারাজা, কবিকে করেছেন আশাবাদী ও উজ্জ্বল। এই চেতনার কবির কাব্যিক স্ফুলিঙ্গ হল ‘বঙ্গবন্ধু’; যা একতা, প্রতিশ্রুতি ও মহিমায় উন্নীত ।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ সংবাদ

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ

0
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে হাজার খানেক শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজ...

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নতুন ডিজি কাউসার নাসরীন

0
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) কাউসার নাসরীন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ অধিশাখার সিনিয়র...

শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত

0
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে পাসগুলোর কার্যকারিতা থাকবে না। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি...

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেফতার

0
ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর...

‘শেখ হাসিনা নিজেকে অনেক কিছু ভাবতে পারেন, তবে বাস্তবতা ভিন্ন’

0
ভারতে বসে শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যগুলো বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে...