আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামিদের নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি : সংগৃহীত
আজ যাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়, তারা জুলাই-আগস্টের গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। সংখ্যায় কম নন, ১৩ জন। তারা মাস তিনেক আগেও হাম্বরা ভাব নিয়ে যা-ইচ্ছে তাই করেছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। এমন সব অভিযোগের শুনানিতে ট্রাইব্যুনালে আসামির কাঠগড়ায় কেটেছে বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, কামাল আহমেদ মজুমদার, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকেরা।
আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুটি মামলার ওপর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে প্রথম মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, অপরটি তারই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে। বেলা ১১টা আজ সোমবার শুনানির পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আজ হাজির করা ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি দুই মামলায় আগামী ১৭ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ সময়ে প্রসিকিউশনকে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের অগ্রগতি দাখিল করতে বলা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর আডভোকেট তাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শায়েখ মাহাদি, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ। আসামি পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এহসানুল হক সমাজী, আজিজুর রহমান দুলু প্রমুখ।
মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ আসামি হলেন–সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার,গোলাম দস্তগীর গাজী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম।
সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আদালতে এজলাসে হাজির করা হয় আসামিদের। পিনপতন নিরবতার মধ্য দিয়ে শুনানিকালে ডা. দীপু মনিকে বিচারকক্ষের এজলাসের পাশে চেয়ারে বসানো হয়। পাশে দুইজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা দাঁড়নো ছিল। অন্য ১২ আসামিকে কাঁচ দিয়ে ঘেরা কাঠগড়ায় চেয়ারে বসানো হয়। পরে বেলা ১১টায় বিচারকক্ষে প্রবেশ করেন তিন বিচারপতি। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টা ৩ মিনিটে প্রথমে ১নং মামলাটি শুনানির জন্য ডাকেন বেঞ্চ কর্মকর্তা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আজ আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী শুনানি করতে এসেছেন। তবে তিনি রাষ্ট্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে যাচ্ছেন বলে জেনেছি। দু’এক দিনের মধ্যেই হয়তো সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। তাই তিনি আসামিপক্ষে শুনানি করলে এটা হবে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। এ সময় তাজুল ইসলাম তাকে আসামিপক্ষে শুনানি না করতে অনুরোধ জানান।
এরপর অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী আদালতকে বলেন, ‘আমি এখনও ফরমাল কোনো লেটার পাইনি। ফরমাল লেটার পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না। এ ছাড়া যে পদে আমাকে নির্বাচিত করা হবে, সেটা আমি গ্রহণ করি কি না, তা-ও ভাববার বিষয়।’
এ সময় বিচারক অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীর কাছে জানতে চান, কোন আসামির পক্ষে তিনি শুনানি করতে এসেছেন? উত্তরে এহসানুল হক সমাজী পাঁচজন আসামির নাম বলেন। তারা হলেন—সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, ফারুক খান, তৌফিক-ই-ইলাহি ও জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে এহসানুল হক সমাজী শুনানি না করে আরেক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলুকে দায়িত্ব দেন।
পরে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, বিজ্ঞ আদালত এ মামলায় শেখ হাসিনা একমাত্র আসামি। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ সময় আদালত জানতে চান, এ আসামি কি গ্রেপ্তার হয়েছেন? জবাবে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ আদালত এই একমাত্র আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছি। তাকে পাওয়া মাত্র গ্রেপ্তারের জন্য। আমরা সরকারিভাবে জেনেছি, তিনি ভারতে পলাতক রয়েছেন। সেজন্য বন্দি চুক্তির আওতায় তাকে ফেরানোর চেষ্টা করছে সরকার।
এ সময় আদালত প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, এ মামলার প্রতিবেদন রিপোর্ট কোথায়? জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ আদালত গত সাড়ে ১৫ বছরে যে পরিমাণ অপরাধ করেছে, তা নিয়ে তদন্ত সংস্থা কাজ করছে। আমাদের আরও দুই মাস সময় প্রয়োজন। পরে আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করেন।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিডিআর বিদ্রোহে ৭৪ জনকে হত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। বক্তব্যে প্রসিকিউটর বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাসে ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশে নজীরবিহীন ঘটনা ঘটে। বিদেশি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে একীভূত হয়ে সারা বিশ্বে সমাদৃত দেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের জন্য পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা নিজে নেতৃত্ব দিয়ে দলের নেতাদের ব্যবহার করেছেন। সেনাবাহিনীর চৌকস ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস ও পথে বসানো এবং সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার সুপরিকল্পিত করা হয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যকার ১৩ জনকে আজ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আগামী দিনে যারা ফ্যাসিস্ট হতে চান, তাদের জন্য আজকের দিনটি এক শিক্ষার দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ, দলীয়করণের মাধ্যমে একটি নিপীড়ক সংস্থায় পরিণত করা হয়েছিল। আজকের সব অপরাধের প্রধান দায় শেখ হাসিনার। জুলাই অভ্যুত্থানে ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
তাজুল বলেন, সাড়ে ১৫ বছরের সব অপরাধের কেন্দ্রে ছিলেন শেখ হাসিনা, আর মন্ত্রী-এমপিরা ছিলেন তার সহযোগী। ক্ষমতায় এসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ। ব্ল্যাকআউট করে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ হাসিনা। আর এই ১৩ আসামি ছিলেন তার সহযোগী।
তাজুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরের শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই, যেটা শেখ হাসিনা করেননি। আর উপস্থিত এই আসামিরা এসব অপরাধ সংগঠনে সহযোগিতা করে গেছেন। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা, অঙ্গহানিসহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, শুধু জুলাই-আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই গুম-খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে। হিটলারের সময়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প তৈরি করে তাতে নিষ্ঠুরভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়।
রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে উদ্দেশ হাসিল
শেখ হাসিনা ও আসামিদের অপরাধের ধরন তুলে ধরে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষী বাহিনী তৈরি করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল। প্রতিপক্ষকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে ঘায়েল করা হয়। জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনা ছাত্রদের কোটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বলেছিলেন—মুক্তিযুদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবেন নাকি রেজাকারের নাতিপুতিরা চাকুরি পাবেন? রাজাকার বলে ছাত্রদের হেনস্তা করেছিলেন। এতে ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ছাত্ররা, কিন্তু তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে হত্যা যজ্ঞ চালানো হয়।
র্যাবকে ব্যবহার করে খুন-গুম
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা ভিন্ন মত সহ্য করতে পারতেন না। ভিন্ন মতের কেউ হলে খুন করে লাশ গুম করা হতো। আয়নাঘর তৈরি করে সেখানে বছরের পর বছর মানুষকে আটক রাখা হতো। পরিবার লাশের অপেক্ষা করেও কোনো হদিস পেত না। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের অপরাধের কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। ছাত্র-জনতাকে হত্যা করতে পুলিশ র্যাব সবাইকে ব্যবহার করেছিলেন হাসিনা।
বাকস্বাধীনতা হরণে কালো আইন
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অপরাধের মাত্রা তুলে ধরে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভিন্নমতের সাংবাদিকদের দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে কালো আইন তৈরি করে। এ আইনের কয়েকটি ধারা ব্যবহার করে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে হরণ করেন শেখ হাসিনা। বহু বছরে মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিকদের কারাগারে নিক্ষেপ, হত্যা, গুম করা হয়।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যা
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয়। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়। যে ভিডিও দেখে সারাবিশ্বের মানুষ কেঁদেছে। যা দেখে সারাবিশ্বের মানুষের বুক কেঁপে ওঠে। হত্যাকাণ্ডের পরিণতি এত ভয়াবহ ছিল মানুষ এখনো আঁতকে ওঠে। এ হত্যাযজ্ঞ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এতটা নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে যে, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে। ইপিসোড থেকে ছাত্রকে ছুঁড়ে মারা হয় রাস্তায়।
সামনে দাঁড় করিয়ে বুকে-মাথায় গুলি
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নিষ্ঠুরতার কথা তুলে ধরে আদালতে বলেন, ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর এপিসি গাড়ি থেকে যেভাবে ফেলে দেয়, তা বর্ণনা করার মতো না। লাশ দুজনে দুই হাত ধরে ছুড়ে মারে। এ ছাড়া সামনে দাঁড় করিয়ে বুকে মাথায় গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। জুলাই-আগস্টে দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।
এরপর আদালতে দ্বিতীয় মামলার শুনানি শুরু হয়। এ সময় তাজুল ইসলাম বলেন, মামলায় হাজির ১৩ আসামি সহযোগী হিসেবে সবাই অপরাধী।
তাজুল ইসলাম ১৩ জনের অপরাধের সম্পৃক্ততার তথ্য আদালতে উপস্থাপন করে বলেন, জুলাই-আগস্টে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ছাত্র-জনতাকে রাজাকারের প্রেতাত্মা বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া আন্দোলন দমানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উসকে দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে টাকা-পয়সা দিয়ে এবং হত্যাযজ্ঞ চালাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।
এ ছাড়া শ্রমিক লীগকে হত্যা যজ্ঞের জন্য ব্যবহার করেছে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, একইভাবে ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী হাসিনার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক টিভির টকশোতে বিভিন্ন কথা বলে উসকে দিয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালান।
রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ১৪ দলের শরীক হিসেবে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ মরুক, তাতে কিছুই আসে যায় না–এমন মনোভাব নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে স্বৈরাচার হাসিনাকে উৎসাহিত করেছেন।
জুনাইদ আহমেদ পলক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে হত্যাযজ্ঞ ধামাচাপা দিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছেন।
বিজ্ঞ আদালত যাদের বয়স ১৯৯৭ সালের পর তাদের এ মুহূর্তে বলা হচ্ছে জেন-জি। এ স্বৈরাচারের পতনে তারা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন। দীর্ঘদিনের মানুষের জমাকৃত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল এটি।
ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় যেমন ছিলেন আসামিরা
ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা। এমন সময় আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় সাবেক মন্ত্রী, সচিবসহ ১৩ আসামিকে। আরও একজনকে হাজির করার কথা ছিল। নাম আব্দুর রাজ্জাক। অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাকে হাজির করা হয়নি।
আসামিদের মধ্যে ডা. দীপু মনিকে কাশিমপুর কারাগার, অপর ১২জনকে কেরানীগঞ্জ থেকে হাজির করা হয়। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যান থেকে তাদের নামানো হয় একে একে। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে দীপু মনি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন।
আদালতের হেফাজত খানায় নিয়ে যাওয়া হয় সব আসামিকে। বেলা ১০টা ২০ মিনিটে এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন সাংবাদিকরা। এ সময় হেফাজত খানায় আনিসুল হক, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সালমান এফ রহমান খোশ গল্প করতে দেখা যায়। অন্য আসামিদের কেউ কথা বলছিলেন, ঝিমাচ্ছিলেন।
পরে সাড়ে ১০টা তাদের বিচারকক্ষের প্রবেশ করানো হয়। সেখানে আসামিদের জন্য নির্ধারিত কাঠা গড়ায় দুটি সারিতে বসানো হয়। প্রথম সারিতে আনিসুল হক সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা। তার পাশেই টিশার্ট পরা তৌফিক এলাহী ছিলেন। রাশেদ খান মেনন পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ও কর্নেল ফারুক খান ও কামাল আহমেদ মজুমদার শার্ট-প্যান্ট পরে চেয়ারে বসা ছিলেন।
দ্বিতীয় সারিতে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক পাঞ্জাবি-প্যান্ট গরম সুয়েটার গায়ে স্যান্ডেল পরা ছিলেন। হাসানুল হক ইনুও পাঞ্জাবি-পায়জামা ও সুয়েটার পরে ছিলেন। এ ছাড়া জুনাইদ মাহমুদ পলক শার্ট প্যান্ট পরা অবস্থায় অনেকটা নার্ভাস হয়ে চুপচাপ বসে ছিলেন। ডা. দীপু মনিকে কাঠ গড়ার পাশে চেয়ারে পৃথকভাবে বসানো হয়।
বেলা ১১টা মামলার শুনানি শুরু হলে আসামিরা সবাই দাঁড়িয়ে যান। এ সময় প্রসিকিউটর সাড়ে পনের বছরে শেখ হাসিনার অপরাধ পড়ে শোনান। সহযোগী আসামি হিসেবে প্রত্যেকের অপরাধ শুনানোর সময় আনিসুল হক পাশে বসা ডা. দীপু মনির দিকে তাকিয়ে অনেকটা ভেঙচি কেটে হতাশা প্রকাশ করেন। তবে, চুপচাপ চোখ বন্ধ করে গুমাচ্ছিলেন সালমান এফ রহমান। শাহজাহান খান চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কামাল আহমেদ মজুমদার বার বার দাঁড়িয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তবে, আদালত তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি।
দীপু মনি শাড়ি পরে এসেছিলেন। হতাশা ছুঁয়ে ছিল তার মুখজুড়ে। থুতনিতে হাত দিয়ে বসেছিলেন।
শামসুদ্দিন চৌধুরীর অপরাধ যখন আদালতে পড়া হচ্ছিল, তখন তিনি চোখ বড় বড় করে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছিলেন। তবে, কোনো কথা না বলে বসেছিলেন।
শুনানি শেষ পর্যন্ত তারা কাঠগড়ায় বসে ছিলেন। পরে তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং কেউ কেউ পরিবার থেকে পাঠানো খাবার খান।
দুপুর দেড়টার দিকে তাদের প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।