বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক ফাস্ট চার্জিং স্টেশনের (ইভি চার্জিং) যাত্রা শুরু হয় গত বছরের আগস্ট মাসে। এরপর গত ছয় মাসে আরো দুটি ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়। এই চার্জিং স্টেশন থেকে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি এক ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি চার্জ করা সম্ভব হবে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির (ডিপিডিসি) সহায়তায় অডি বাংলাদেশ-প্রগ্রেস ইমপোর্টস লিমিটেড তেজগাঁওয়ে তাদের কার্যালয়ে দেশের প্রথম ফাস্ট চার্জিং স্টেশন চালু করে। এই চার্জিং স্টেশনটি উদ্বোধনের সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করে। আমাদেরও ক্রমান্বয়ে সেদিকে যেতে হবে। ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকল চার্জিং গাইডলাইন অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি, সারা দেশে ইভি চার্জিং স্টেশন চালু হয়ে যাবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সব জায়গায় ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে।’অডি বাংলাদেশ-প্রগ্রেস মোটর ইমপোর্টসের পরিচালক (অর্থ) মো. হাসিব উদ্দিন অনুষ্ঠানে বলেন, ডিজেলে এক লিটারে গাড়ি চলে ১০ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ে ১৩ টাকা। কিন্তু বৈদ্যুতিক চার্জে গাড়ি প্রতি কিলোমিটার আড়াই টাকা থেকে দুই টাকা ৯০ পয়সা খরচ পড়বে।এদিকে গত নভেম্বরে ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ডেসকো ও সুমাত্রা ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগে ক্র্যাক প্লাটুন সলিউশন লিমিটেড তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ইলেকট্রিক গাড়ি (ইভি) চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে। স্টেশনটি মিরপুর-১২-তে অবস্থিত। এই স্টেশনের মাধ্যমে যেকোনো ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ করা যাবে। ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো গত ডিসেম্বরে যশোর শহরের খয়েরতলা এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন উদ্বোধন করা হয়েছে।গত বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর-১২-তে সুমাত্রা ফিলিং স্টেশনে গিয়ে কথা হয় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সুমাত্রা ইভি চার্জিং স্টেশনের দায়িত্বরত প্রকৌশলী মো. সাঈদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রচারণা কম থাকায় বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো চার্জ দিতে তেমনভাবে আসছে না। তাই গাড়ি আমদানিকারক ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রচারণা বাড়াতে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিকে। তাহলে দ্রুত দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারও বাড়বে এবং গাড়ি চার্জিংয়ের জন্য মানুষও স্টেশনে আসবে। আমাদের এখানে চার ধরনের চার্জিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে সব ধরনের ইলেকট্রিক গাড়ি ও হাইব্রিড গাড়িগুলো চার্জ দিতে পারবে।’
মো. সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ফাস্ট চার্জিংয়ের মাধ্যমে এক ঘণ্টারও কম সময়ে একটি গাড়ির ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দেওয়া সম্ভব। জ্বালানি তেলের ব্যয়ের তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারে ব্যয় অনেক সাশ্রয়ী। বৈদ্যুতিক চার্জে গাড়ি প্রতি কিলোমিটার চালাতে খরচ পড়বে প্রায় তিন টাকার মতো। দেশে যেসব বৈদ্যুতিক গাড়ি চলছে সেগুলো একবার পুরোপুরি চার্জিংয়ে সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে গাড়ির ব্যাটারির ক্যাপাসিটির ওপর।’
বাংলাদেশে সর্ব প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি (প্রাইভেট কার) উৎপাদন করে বাজারজাত শুরু করে পালকি মোটরস। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের জুন থেকে দেশে বাজারজাত করছে।
ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পালকি মোটরসের সিইও মোস্তফা আল মমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের বাজারে আমরা এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক গাড়ি বিক্রি করেছি। আমাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি ১৫০ কিলোমিটার চালাতে মাত্র ১২০ টাকা খরচ হয়। যার কারণে ক্রেতার কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখন টেসলা, অডিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ইলেকট্রিক গাড়ি বাজারজাত করছে।’ মোস্তফা আল মমিন বলেন, ‘দেশে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হলে ইলেকট্রিক গাড়ির সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।’