বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া করতোয়া নদীর নাব্যতা ফেরাতে চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে খনন কাজ। প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটার খনন কাজের টেন্ডার আহ্বান এবং ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খনন কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
করতোয়া নদী দখল ও দূষণ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরইপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের টনক নড়ে।
জানা যায়, প্রায় ১৮০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন পুণ্ড্র নগরীর গোড়াপত্তন হলেও সেই সভ্যতার সঙ্গে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে। যে নদীতে চলতো বড় বড় নৌ-যান, সেখানে এখন আর ডিঙি নৌকাও চলে না। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আবার বর্ষায় ছোট্ট বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হয় মানুষ। করতোয়া নদীতে সত্তর দশকে প্রচুর পানি থাকায় প্রমত্তা ছিল। জনশ্রুতি আছে করতোয়া নদীতে সওদাগরী জাহাজ, লঞ্চ এবং বড় বড় নৌকা বজরা যাতায়াত করতো। পণ্য পরিবহন হতো এবং ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। পুণ্ড্র বর্ধন নগরী বগুড়া এবং করতোয়া নদীকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কালক্রমে সেগুলো বিলিন হওয়ার পথে। বিলীন হওয়া করতোয়া নদীর যৌবন ফেরাতে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে দখল-দূষণের করতোয়া নদী আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন টিএমএসএস এর দক্ষিণ থেকে ১৭ কিলোমিটার নদী খনন করার সিদ্ধান্ত হয়। এরইপ্রেক্ষিতে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে মোট ১৩টি গ্রুপে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে করতোয়া নদী খননের জন্য ৯টি গ্রুপ টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডার আহ্বানের পর ঠিকাদারও নির্বাচন করা হয়েছে।
করতোয়া নদী খননের পাশাপাশি এসপি ব্রিজ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত ওয়াকওয়ে হবে। তাতে গাছ লাগানো থাকবে। বসার জন্য বেঞ্চও থাকবে। চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি নির্মল বাতাস গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল জানান, বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খার প্রতিফলন জেলা প্রশাসকের ঐকান্তিক চেষ্টাদ্বারা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এতে শুধু নদীই তার প্রাণ ফিরে পাবে না, ফিরে পারে বগুড়াবাসীর লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সারাদেশে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করছেন তারাই ধারাবাহিকতায় করতোয়া নদী একটি প্রমাণ হিসেবে থাকবে। তিনি যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন করতোয়া নদী খনন ও দূষণমুক্ত হলে বগুড়া শহর স্মার্ট ও সবুজ নগরীতে পরিণত হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক জানান, করতোয়া নদীর প্রাণ ফিরে পেতে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। পানি প্রবাহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে করতোয়া নদীর পরিবেশ দূষণ বন্ধ, শহরের যানজট নিরসনে সড়ক নির্মাণ। নদী দখলমুক্ত করণ। করতোয়া নদীর বগুড়া জেলা অংশের শিবগঞ্জ উপজেলার উত্তরের সীমানা থেকে শেরপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত মোট ১২৩ কিলোমিটার এলাকা খনন। নদীর দুই পাড়ের ২৭ কিলোমিটার এলাকায় ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা ও ৬ ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাস্টার ড্রেন নির্মাণ কাজ, পানি নিয়ন্ত্রণে তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর দুই পাড়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, পানির ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ কাজ। এ প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ থাকবে। প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হবে। পর্যায়ক্রমে ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।