- আজ ডাক্তারদের ধর্মঘট
- মমতার পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার বিজেপি
- সহিংসতার জন্য সিপিএম ও বিজেপির ওপর দোষ চাপালেন মমতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এক নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় চলা বিক্ষোভ পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে। আজ সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই আন্দোলনের মধ্যে দেশটির উত্তরাখণ্ডে এক নার্স ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শিলিগুড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক কিশোরী। চিকিৎসক ধর্ষণের ঘটনা মোড় নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবির দিকে। গত এক দশকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি মমতার পদত্যাগের দাবিতে গতকাল শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছে। মমতা আন্দোলনের জন্য দুষছেন সিপিএম ও বিজেপিকে।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে
ঘটনাসংশ্লিষ্ট আর জি কর হাসপাতালে ভাঙচুর করার পর দেশটিতে বিক্ষোভ আরো তীব্র হয়েছে। নৃশংস সেই অপরাধের প্রতিবাদে কলকাতা শহরে আয়োজিত বিশাল ‘রাতের দখল নাও’ কর্মসূচি চলার সময় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সহিংস হামলা হয়। হামলা হয় পুলিশের ওপরও। কলকাতার পাশাপাশি দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও পুনের মতো আরো অনেক ভারতীয় শহরেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। অন্যান্য শহরে চিকিত্সকদের বিভিন্ন সমিতি এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলোও ধর্ষণ ও হত্যার পর হাসপাতালে হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার সমাবেশ করে। কলকাতার বিভিন্ন জেলায় শুক্রবার ১২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করে সিপিএমসহ রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
এর আগে ‘স্বাধীনতা এবং ভয় ছাড়াই বাঁচার স্বাধীনতা’ দাবিতে বুধবার রাতে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে কয়েক হাজার নারী পুনরুদ্ধার দ্য নাইট মার্চে অংশ নিয়েছিলেন। যদিও বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণ থাকার পরও পুলিশ ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের একটি ছোট দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষ চলার পর কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে প্রবেশ করে অপরাধের স্থান এবং জরুরি ওয়ার্ডে ভাঙচুর করে। অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, একদল ব্যক্তি লাঠি দিয়ে বিছানা ও যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করছে। যদিও পুলিশ দাবি করেছে, অপরাধস্থলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে, হামলায় কয়েক জন চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মী আহত হয়েছে। বিশৃঙ্খলায় পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। বিরোধী বিজেপি শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে হামলার পরিকল্পনার জন্য অভিযুক্ত করেছে। বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, হাসপাতালে হামলার সঙ্গে তাদের দলের কেউ জড়িত নয় এবং সহিংসতার জন্য ‘রাজনৈতিক বহিরাগতদের’ দায়ী করেছে।
৩১ বছর বয়সি নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, উত্তরাখণ্ড রাজ্যের প্রধান শহরে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় এক নার্সকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি জুলাইয়ের শেষে নিখোঁজ হয়েছিলেন এবং গত সপ্তাহে তার লাশ পাওয়া যায়। শিলিগুড়িতে এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনা চলমান আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। এদিকে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে ছয় বছরের এক দলিত মেয়েকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মমতার পদত্যাগের দাবিতে মাঠে বিজেপি
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের শাসনে এ রকম আন্দোলনের মুখে পড়েননি আন্দোলনের মাধ্যমে জয়লাভ করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মমতা ব্যানার্জি। তার পদত্যাগ চেয়েছেন রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ চিকিত্সক ও বিরাট অংশের নারীসমাজ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাঁটেন কলকাতার রাস্তায়। আবার এ দিনই ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় বাম দল এসইউসিআই। সকালের দিকে মৃদু প্রভাব পড়লেও বেলা বাড়ার পর স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। তবে বেসরকারি স্কুলগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে।
আজ ভারত জুড়ে ডাক্তারদের কর্মবিরতি
আজ শনিবার ভোট ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশ জুড়ে চিকিত্সকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কিছু খোলা থাকবে না। আউট পেশেন্টস ডিপার্টমেন্ট বা ওপিডি বন্ধ থাকবে। জরুরি নয়, এমন অস্ত্রোপচারও হবে না। দেশের সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এই কর্মবিরতিতে যোগদান করবেন বলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ জানিয়েছে। আইএমএ হলো দেশ জুড়ে চিকিত্সকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএমএ) জানিয়েছে, তারাও আজকের কর্মবিরতিতে যোগ দেবে। ডিএম জানিয়েছে, আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে জরুরি পরিষেবাও বন্ধ রাখা হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল চত্বরে চিকিত্সক বা চিকিত্সাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ৬ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করতে হবে। আরজি কর হাসপাতালে সেমিনার রুমের কাছে একটি ঘর সংস্কারের জন্য ভেঙে ফেলা এবং বুধবার রাতে দুষ্কৃতদের তাণ্ডব নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভর্ত্সনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
মমতাও রাস্তায়
আরজি করের ঘটনার অভিযুক্তর ফাঁসির দাবিতে গতকাল শুক্রবার মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনটি দাবিতে মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী। সিবিআইকে প্রতিদিন তাদের তদন্তের অগ্রগতির কথা জানাতে বলা হয়। কলকাতা পুলিশকে ১৭ আগস্টের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছিল। সেটা সিবিআইয়ের ক্ষেত্রেও বলবৎ হওয়া উচিত। কলকাতা পুলিশ এক জন অভিযুক্তকে ধরেছিল। সিবিআই বাকি সবাইকে ধরে মামলাটি ফয়সালার জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঠাক।
পুলিশের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘সারা রাত ঘুমাইনি। জেগে ছিলাম, কখন শান্তি ফিরে আসবে।’ মুখ্যমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধীর পথ অনুসরণ করে অহিংস আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছেন। মমতা বলেন, ‘আমি যত শান্ত থাকি, আপনাদের মঙ্গল। আমাকে আঘাত করলে আমি হয়ে যাই টর্নেডো, সাইক্লোন। নিজেকে কেয়ার করি না। মানুষকে কেয়ার করি। যারা দোষী, তাদের কথা না বলে আমাকে মারতে যান। কিছু রয়েছে যদু বংশ। তাদের কেউ কেউ আমাদের ভালো জিনিস ভালো বলে। তাদের কাজ বদনাম করে দাও। আমাদের সিইউয়ের ছেলেমেয়েরা পিএইচডি করা। যাদবপুরেও তাই।’
সংস্কৃতিকর্মীরাও আন্দোলনে
১৪ অগস্টের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে টলিপাড়ার অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার পথে নামেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় ও টোটা রায়চৌধুরীরা। গতকাল বিকালে সেন্ট জয়েভিয়ার্স কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল করেন। মিছিলে হেঁটেছেন প্রসেনজিৎ, টোটা, অরিন্দম শীল, বিক্রম ঘোষ, পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্তের মতো সাবেক শিক্ষার্থীরা। মিছিলে হাঁটেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
—আনন্দবাজার পত্রিকা, হিন্দুস্তান টাইমস ও আল জাজিরা