মাশিরা বিডির স্বত্বাধিকারী শহীদুল্লাহ ইমরান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাঁরা বলেছেন, আমরা তাঁদের প্যাকেট নকল করছি। আর খোলা চিনি প্যাকেটজাত করি। সরকারের যত নিয়ম আছে, সব মেনে তা করি। ট্রেডমার্ক, ট্রেড লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের সার্টিফিকেটসহ সব দেওয়ার পর বিএসটিআই মোড়কজাত করার অনুমোদন দিয়েছে। আমি বাজার থেকে চিনি কিনে এনে প্যাকেজিং সেরে বিক্রি করি। বিএসএফআইসির চিনি যদি বাজার থেকে কিনে এসে প্যাকেজিং না করা যায়, সেটা আমাকে জানাতে হবে, আমার এটা জানা নেই। আমাকে বলে দিতে হবে যে বাজার থেকে আখের চিনি কিনতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘বিএসএফআইসির চিনি ১৪০ টাকা কেজি। আমার কথা, তারা কি এই দামে প্যাকেটজাত চিনি দিতে পারছে? প্যাকেট তো দেয় না। যদিও সারা ঢাকা শহরে ৮০ শতাংশই সরকারি প্যাকেট ১৭০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারছে না, কিন্তু আমি সব অনুমতি বিয়ে প্যাকেট করছি, কিন্তু এটা করা যাবে না। ঠিক আছে, তাদের লিখিত দিতে হবে যে আমি প্যাকেজিং পারব না।’
তাঁর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ‘বাধ্যতামূলক পণ্যগুলো প্যাকেজিংয়ের জন্য বিএসটিআই সনদ দেয়। তার মানে এই নয় যে প্যাকেটের ভেতর কালোবাজারি করে বা অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য নিয়ে এসে প্যাকেট করে বিক্রি করতে পারবেন। উনি কোত্থেকে চিনি নিয়ে এসেছেন? মৌলভীবাজারের কার কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন? এমন কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। বিএসএফআইসির বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মাশিরা বিডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অধিকতর তদন্ত-পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উনাদের আর্থিক জরিমানা হতে পারে। ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। উনার কাছে আট হাজার ৭৫০ কেজি চিনি আছে। সেই চিনিগুলো ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্য মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি চিনি নির্ধারিত দামে না পাওয়ার ক্ষেত্রে বিএসএফআইসির অব্যবস্থাপনাই দায়ী। একটা সময় তাদের অফিসের সামনে সেল সেন্টার থেকে চিনি বিক্রি করত। তখন বাজারে চিনি পাওয়া যেত। এরপর সেটা বন্ধ করে দিয়ে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করল। আর যখনই এটা করল, তখন থেকে বাজারে যা পাওয়া যেত, তা-ও বন্ধ হয়ে গেল। তার মানে সমস্যাটা বিএসএফআইসিতে। তারা যে পরিমাণ চিনি উত্পাদন করে, সেটা যদি সঠিক সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজারে দেওয়া যেত, তাহলে বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে যেত না। এতে বেশি দাম দিয়ে চিনি কিনতে হচ্ছে।’
বস্তাজাত চিনি কিনে প্যাকেটজাত করা নিয়ে তিনি বলেন, এটা তো হতেই পারে না। তাকে তো বিএসএফআইসি প্যাকেটজাত করার অনুমতি দেয়নি। তাহলে তারা বাজারজাত করে কিভাবে? চিনির মালিক তো তারা নয়। এ জন্য ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কথা। বিএসএফআইসির ডিলাররাই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। ডিলারদের মনিটরিং দরকার। চিনি দেওয়ার পর তারা কী করছে, সেটা না দেখলে সংকট সৃষ্টি হবে।
বাজারে বাড়তি দামে সরকারি চিনি বিক্রির বিষয়ে বিএসএফআইসির সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ভোক্তা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছি। বাড়তি দামে আমাদের চিনি বিক্রি ঠেকাতে যা যা করা দরকার, আমরা করছি। কিছুদিন আগে ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযানও চালিয়েছে।’