বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৬০ জন আসামির মধ্যে হাইকোর্ট ১৪৬ আসামির সাজা বহাল রেখে ১৪ জনকে খালাস দেন। এ ছাড়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে ৩১ আসামির খালাসের রায় বাতিল করে তাঁদের যাবজ্জীবন এবং চারজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৩৪ জনের ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বহাল থাকে। সব মিলিয়ে ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন, চারজনের সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৫৩ জনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত।
এই রায়ের তিন বছর পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেও ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি তুলে আপিল ও লিভ টু আপিল করতে লেগে যায় প্রায় দেড় বছর। পরে পেপারবুক তৈরিতেও সময় যায়।
আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল-লিভ টু আপিল
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের তথ্য মতে, হাইকোর্টের রায়ে খালাস দেওয়া হয়েছে বা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন হয়েছে এমন ৮৩ আসামিদের সাজা বাড়াতে ২০টি লিভ টু আপিল করা হয়েছে। আসামিপক্ষের এক আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৬৩ জন আসামির পক্ষে ৩৫টি আপিল এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৬২ জনের ৩৩টি লিভ টু আপিল করেছেন তিনি। গত বছর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের সারসংক্ষেপ (কনসাইজ স্টেটমেন্ট) জমা দেয়। এর পর থেকে শুনানির অপেক্ষায় উভয় পক্ষ।
জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপিল বিভাগে পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারক নেই। আশা করছি, বিচারক এলে (নিয়োগ হলে) এর (এই মামলার শুনানির) জন্য আলাদা একটি বেঞ্চ গঠন করা হবে। কারণ এই মামলার শুনানি শুরু হলে অন্য মামলা হয়তো শুনতেই পারবেন না। এ মামলার টানা শুনানি হলেও মনে হয় না দুই মাসের আগে শেষ হবে।’
মামলাটির শুনানি করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিপক্ষের একটি আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় তোলা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারির কার্যতালিকাতেও ছিল। মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে আকুল আবেদন, উভয় পক্ষের কথা বিবেচনা করে যদি মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করেন, তবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সাক্ষ্যগ্রহণে আটকে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার বিচার
দুটি মামলা একই সময় হলেও গত ১৫ বছরে শেষ হয়নি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলার বিচার। এটি এখনো অনেক দূরের বিষয়। গত কয়েক বছর ধরে সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে এই মামলার বিচারকাজ। জানা গেছে, এক হাজার ২৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ২৭২তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে এক বছর ধরে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আর কতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করবে, তা আমাদের এখনো জানায়নি। ফলে বলা যাচ্ছে না সাক্ষ্যগ্রহণ আর কত বছর চলবে। ১৫ বছর ধরে মামলাটির বিচার চলছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যাখ্যা থাকা উচিত।’
তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিনের ভাষ্য, সময় কেবল রাষ্ট্রপক্ষের লাগছে না, আসামি বেশি হওয়ায় ওই পক্ষেরও সময় লাগছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘মামলার শত শত আসামির শত শত আইনজীবী। সাক্ষ্য দেওয়ার পর একজন সাক্ষীকে যদি সব আইনজীবী জেরা করেন তাহলে কত সময় প্রয়োজন?’
বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সর্বনিম্ন শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া এবং সাজা খেটে ফেলা সবাই বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার আসামি। ফলে খালাস পেলেও বা সাজা খেটে ফেললেও তাঁদের কারামুক্তি মিলছে না। এমন ৪০ জনের পক্ষে জামিন আবেদন করেও সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।