26 C
Dhaka
সোমবার, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

বিদেশে পাচার করা অর্থ সাবেক ৬ মন্ত্রী ৫ এমপির সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি

সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ৬ প্রভাবশালী মন্ত্রী, ৫ জন সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) ও তাদের স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ ৩১ জনের অর্থ সম্পদের তথ্য সংগ্রহের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দেশে ও বিদেশে থাকা সব ধরনের অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে ওইসব ব্যক্তি ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএফআইইউ এসব তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করবে। তারা নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী তদন্ত করবে। ইতোমধ্যে এসব সংস্থাগুলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ছয়জন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর তথ্য চেয়ে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। এদের প্রত্যেকের স্ত্রী, সন্তান, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর কোনো সম্পদ থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এমপিদের মধ্যে রয়েছেন, জামালপুর-৩ আসনের মির্জা আজম, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুল ও পিরোজপুর-১ আসনের মহিউদ্দিন মহারাজ। সাবেক এমপিদের প্রত্যেকের স্ত্রী, সন্তান, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ-সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী, এমপি মিলে রয়েছেন ১১ জন। তাদের স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ রয়েছেন আরও ২০ জন। ৩১ জনের অর্থ সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী-এমপি ছাড়া আরও রয়েছেন আইনমন্ত্রীর সহযোগী সিটিজেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান তৌফিকা আফতাব, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী ও সন্তান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দুই সন্তান, আইনমন্ত্রীর স্ত্রী ও দুই সন্তান, ভূমি প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও দুই সন্তান, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রীর স্ত্রী ও দুই সন্তান, তথ্য প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী। এদের প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের নামেও অর্থ সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা ছিল। ওই সময়ে তারা নানাভাবে দুর্নীতি, ঘুস ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ সম্পদ গড়েছেন। এগুলোর বড় অংশই বিদেশে পাচার করেছেন। ওইসব সম্পদ দিয়ে তারা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যও করছেন। এতে দেশের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গত আড়াই বছর ধরে দেশে যে ডলার সংকট চলছে এবং তা থেকে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি হয়েছে তার অন্যতম কারণ দেশ থেকে টাকা পাচার। দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নতুন সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। সেজন্য তাদের নামে অর্থ সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিএফআইইউসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রাথমিক তদন্তে আলোচ্য ৩১ জনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ-সম্পদের সন্ধান মিলেছে। যে কারণে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিদেশের পাশাপাশি তাদের নামে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সম্পদের তথ্যও নেওয়া হচ্ছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিএফআইইউ থেকে দুদক ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করা হবে। এর আলোকে সংস্থাগুলো আরও তদন্ত করে অভিযুক্তদের নামে মামলা করবে।

সূত্র জানায়, বিএফআইইউ ওইসব ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের কাছে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। বিশ্বের ১৭৭টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটগুলো এই গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশে থেকে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে সেসব দেশ এ গ্রুপের সদস্য। এ গ্রুপের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দেশ তথ্য চাইলে তারা সংশ্লিষ্ট সদস্য দেশগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে বিএফআইইউ অনেক ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেছে।

এছাড়া বিএফআইইউ ৮১টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় দেশ ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের প্রয়াত পিতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে লন্ডনে বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এগুলোকে পরে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ আরও বাড়িয়েছেন। দুবাইয়ে তিনি একটি পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ করছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে তার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

গত নির্বাচনের আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, সরকারের একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। পরে জানা যায়, ওই মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

শফিকুল ইসলামের স্ত্রীর নামে নাটোরে জান্নাতি প্যালেস নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি কানাডায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে অর্থ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে।

সূত্র জানায়, এর বাইরে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আরও সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ী নেতাদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল অর্থ-সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। বিএফআইইউ সেগুলো নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রের মাধ্যমে তদন্ত করছে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চাওয়া হবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ সংবাদ

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ

0
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে হাজার খানেক শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজ...

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নতুন ডিজি কাউসার নাসরীন

0
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) কাউসার নাসরীন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ অধিশাখার সিনিয়র...

শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত

0
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে পাসগুলোর কার্যকারিতা থাকবে না। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি...

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেফতার

0
ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর...

‘শেখ হাসিনা নিজেকে অনেক কিছু ভাবতে পারেন, তবে বাস্তবতা ভিন্ন’

0
ভারতে বসে শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যগুলো বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে...