রংপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গতকাল মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সারজিস আলমছবি: সংগৃহীত
সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার না আসা পর্যন্ত সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মত ও আদর্শের মানুষ আন্দোলনে যেভাবে রাজপথে ছিল, সেভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে রংপুর টাউন হল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেন সারজিস আলম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল রংপুর ছাড়াও সাতক্ষীরায় ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ করেছে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে জেলায় জেলায় গিয়ে মতবিনিময় সভা করছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা।
রংপুরে মতবিনিময় সভায় সারজিস আলম বলেন, ‘দুই মাস আগে এই তারিখে (১৬ জুলাই) যে কয়েকজন ভাইকে আমরা হারিয়েছি, তাঁদের একজন আবু সাঈদ ভাই। আরেকটি স্বাধীনতার জন্য যাঁরা বুক পেতে দিয়েছিলেন, নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।’
সারজিস বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তাঁদের কিছু দোসর দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। কিছু রয়েছেন জেলে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের রাজনৈতিক মত ও আদর্শগুলোকে একত্র করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে রাজপথে ছিলাম, একইভাবে ফ্যাসিস্টদের প্রতিহত করা। যত দিন সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার না আসছে, তত দিন পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের প্রতিহত করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, আন্দোলনে ছাত্র-জনতার স্পিরিট ধরে রাখতে হবে। পেছন থেকে সাপেরা এখনো ছোবল দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিহত করার জন্য দেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের জন্য যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলাদলি এক পাশে রেখে যত দিন জনগণের দ্বারা একটি নির্বাচিত সরকার না হচ্ছে, তত দিন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি মোনায়েম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভার আগে গতকাল দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে রংপুরে আন্দোলনে আহত ব্যক্তি এবং নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন সমন্বয়কেরা।
এদিকে গতকাল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, আকরাম হোসেন রাজ, বিশ্বজিৎ দত্ত, আশরাফুল হক, মোকাইল হোসেন চঞ্চলসহ স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা।
সাতক্ষীরার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দখলদার ও চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা, মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত, যোগাযোগব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়সহ জেলার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা কীভাবে সমাধান করা যায়, এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় সভায়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. রবিউল বাসার প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত সাতক্ষীরার দেবহাটার আসিফ হাসানের বাড়িতে যান সমন্বয়কেরা। সেখানে আসিফ হাসানের কবর জিয়ারত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।