17 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাত সুইং স্টেটে কার অবস্থান কেমন

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ছবি : এএফপি

]আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আর নভেম্বরের ৫ তারিখের ভোটগ্রহণের দিনটি সামনে রেখে তাই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলের কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের তুঙ্গস্পর্শী প্রচার-প্রচারণা।

২০২৪ সালে চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে যাবেন, তা অনেকটাই এখন নির্ভর করছে মুষ্টিমেয় কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আলোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দেশটির ৫০টি রাজ্যই ভোট প্রদান করে থাকে।

দেশটির জটিল ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটর থাকে, সেসব রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। বেশিরভাগ রাজ্যেই পপুলার ভোটের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে সেখানকার সব ইলেকটোরাল ভোট বিজয়ীর পক্ষেই যায়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে পেতে হয় ২৭০টি ভোট। তবে কয়েকটি রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট দোদুল্যমান থাকার ইতিহাস রয়েছে। এই সব দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোকে ‘সুইং স্টেট’ বা  ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ বলা হয়ে থাকে।

এ বছর এরকম সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা সুইং স্টেট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে যাচ্ছে।

১. পেনসিলভানিয়া (১৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

এক সময় ডেমোক্র্যাটদের জন্য বিশ্বস্ত অঙ্গরাজ্য ছিল পেনসিলভানিয়া। এক কোটি ৩০ লাখ অধিবাসীর এই রাজ্যে ২০১৬ সালে ট্রাম্প শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন। তবে ২০২০ সালে জো বাইডেন এখানে ১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট বেশি পান।

পেনসিলভানিয়াতেই দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে বেশ কয়েকবার নির্বাচনি সমাবেশ করেছেন কমলা ও ট্রাম্প।

এই পেনসিলভানিয়াতেই ট্রাম্পের ওপর আততায়ীর হামলা হয় এবং তিনি বেঁচে যান। এখানকার গ্রামগুলোতে শ্বেতাঙ্গদের বসবাস বেশি। ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায় বলেছেন, অভিবাসীরা ছোট ছোট শহরগুলো ক্রমেই দখল করে নিচ্ছে।

তবে কমলা তার প্রচারণায় জোর দিয়েছেন রাজ্যটির ম্যানুফেকচারিং খাতে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করার বিষয়ে আর তা স্থানীয় অধিবাসীদের ভোট টানতে তাকে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২. জর্জিয়া (১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এই অঙ্গরাজ্যটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের জন্য ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে বাইডেনের বিজয়ের সময় কর্মকর্তাদের আরও ভোট ‘খুঁজে দেখার’ আহ্বান জানানোর সেই ঘটনার জন্য এবং ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়ে রাজ্যটি যথেষ্ট আলোচিত।

১৯৯২ সালের পর থেকে বাইডেন এখানে জয়ী হয়েছেন। তবে এখানে কমলা সংখ্যালঘুদের ভোট আকৃষ্ট করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

৩. নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

১৯৮০ সালের পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা এখান থেকে জয়ী হয়েছে মাত্র একবার। তবে কমলা হ্যারিস মনে করেন, এবার হাওয়া ঘুরে যাবে। অঙ্গরাজ্যটির জনসংখ্যা এক কোটির বেশি এবং তা আরও বাড়ছে। আর এতে ডেমোক্র্যাটরা লাভবান হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৪. মিশিগান (১৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ২০১৬ সালের নির্বাচনে এখান থেকে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালে আবার জো বাইডেন এখানে ইউনিয়ন শ্রমিক আর কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটে জয়লাভ করে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানকে শক্ত করেন।

তবে গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে মার্কিন ভূমিকার কারণে এবার এখানকার প্রায় দু্ই লাখ আরব-আমেরিকানদের ভোট কমলার বিপক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

৫. অ্যারিজোনা (১১টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

গ্রান্ড ক্যানিয়ন স্টেটটিতে ২০২০ সালে দু’দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এই লড়াইয়ে ১০ হাজার ৪৫৭ ভোট বেশি পেয়ে শেষ হাসি হাসেন জো বাইডেন।

মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তজুড়ে থাকা এই রাজ্যে অভিবাসী ইস্যু ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কমলা হ্যারিস এখানে সেপ্টেম্বরে নির্বাচনি প্রচারণায় ঘোষণা দেন, তিনিও অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করবেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি অভিবাসী ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন।

৬. উইসকনসিন (১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

২০১৬ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরেও হিলারি ক্লিনটন এই অঙ্গরাজ্যে হেরে গিয়েছিলেন। এখানেই গ্রীষ্মকালীন জাতীয় কনভেনশন করেছিলেন ট্রাম্প এবং তিনি মনে করেন, এখান থেকে জয়ী হওয়া সম্ভব।

প্রাথমিকভাবে এখানকার মতামত জরিপে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও কমলা হ্যারিসের মনোনয়নের পর প্রতিযোগিতা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে অঙ্গরাজ্যটিতে।

৭. নেভাদা (৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট)

প্রায় ৩১ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই রাজ্যটিতে ২০০৪ সালের পর থেকে রিপাবলিকানরা জয়ী হতে পারেনি। তবে এবার ট্রাম্প রক্ষণশীল ও হিস্পানিক ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনয়নের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কমলা হ্যারিস তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন নেভাদার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অতিথি সেবা শিল্প নগরী লাস ভেগাস অবস্থিত।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ সংবাদ

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ

0
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে হাজার খানেক শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজ...

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নতুন ডিজি কাউসার নাসরীন

0
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) কাউসার নাসরীন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ অধিশাখার সিনিয়র...

শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত

0
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে পাসগুলোর কার্যকারিতা থাকবে না। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি...

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেফতার

0
ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর...

‘শেখ হাসিনা নিজেকে অনেক কিছু ভাবতে পারেন, তবে বাস্তবতা ভিন্ন’

0
ভারতে বসে শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যগুলো বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে...