সম্প্রতি ঢাকা ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার রেশ না কাটতেই রাজধানীতে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পিটিয়ে, কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে তাদের হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় পূর্ব শত্রুতা জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নাসির বিশ্বাস (২৩) ও মুন্না হাওলাদার (২৪) নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া সূত্রাপুর এলাকায় ছিনতাইকারিরা ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন জিন্নাহ (৫২) নামে এক অটোরিকশাচালক এবং খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকা থেকে নূর ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত নাসিরের বড় ভাই ইসলাম বিশ্বাস জানান, তাদের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি এলাকার পশ্চিম বালিগ্রামে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। নাসির হাজারীবাগ রায়েরবাজার বাড়ৈইখালী ১২ নম্বর রোডের একটি বাসায় বসবাস করতেন। তিন বোন, ৫ ভাইয়ের মধ্যে নাসির ছিলেন চতুর্থ। সন্ধ্যার দিকে তিনি বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। পরে জানা যায়, কে বা কারা তাকে কুপিয়ে আহত করেছে। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নাসিরের মৃত্যু হয়।
নাসিরের বন্ধু শাওন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মোটরসাইকেলে সাদেক খান কৃষি মার্কেট এলাকায় গেলে মারামারির ঘটনা দেখতে পাই। সেখান থেকে এক যুবক এসে নাসিরের পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন নাসির মোটরসাইকেল থেকে নেমে কবরস্থানের দিকে দৌড় দেন। কিছু যুবক তার পিছু নিয়ে কবরস্থানের এক নম্বর গেটের পাশে নাসিরকে কুপিয়ে আহত করে চলে যান।
মোহাম্মদপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান জানান, সংঘর্ষে নাসির বিশ্বাস নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া সংঘর্ষে আহত মুন্না) নামে একজন আহত হয়। দুই পক্ষের মারপিটের ঘটনায় এই দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নাসিরের ঢামেক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে আর মুন্নার মৃত্যু হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। ধারণা করা হচ্ছে, আগের কোনো বিরোধের জের ধরে শুক্রবার দুজনকে একসঙ্গে অপর পক্ষের লোকজন দেখতে পেয়ে তাদের কুপিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া নিহত মুন্নার নামে ছয়-সাতটি মামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিস্তারিত ঘটনা জানার জন্য পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে, সূত্রাপুর এলাকায় ছিনতাইকারিরা ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন জিন্নাহ (৫২) নামে এক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাচালক। নিহত অটোরিকশাচালক জিন্নাহর গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ির মালিপাড়ায়। তিনি জুরাইন আলম মার্কেটের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
তার ছেলে মো. ইউসুফ জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন তার বাবা। রাত ৩টার দিকে তার মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তি কল করে জানান, জিন্নাহ ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তারা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে জিন্নাহকে মুমূর্ষ অবস্থায় দেখেন। শনিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিন্নাহর মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে তিনি জানিয়েছেন, সূত্রাপুর লোহারপুর এলাকায় যাত্রীবেশে দু’জন ছিনতাইকারী তার অটোরিকশায় দুজন ছিনতাইকারী উঠেছিলেন। তারাই তাকে ছুরিকাঘাত করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে ও সংশ্লিষ্ট থানাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকা থেকে নূর ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে তালতলা ঝিলপাড়ে ঝোপের মধ্যে মরদেহটি পাওয়া যায়। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশের ধারণা, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, ওই ব্যক্তির সারা শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুষ্কৃতিকারিরা ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে। লাশ উদ্ধারের পরে সিআইডির ক্রাইম সিন আঙুলের ছাপের মাধ্যমে তার পরিচয় সনাক্ত করে।
তিনি আরও জানান, ওই ব্যক্তির নাম নুর ইসলাম। ঢাকা কেরানীগঞ্জ আটিরায়েরচর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে উনি। ঘটনার বিস্তারিত জানতে তদন্ত চলছে।