বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার শপথগ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বক্তব্য দেন। ছবি :সংগৃহীত
বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের দুঃসাহসিক আত্মত্যাগ, সাহস ও সারা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার বিনিময় ছাড়া এই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। তাদের সেই মুক্তির আকুতিগুলো উপলব্ধি করে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর যে অকুতোভয় সদস্যরা দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে এ বিজয়কে তরান্বিত করেছেন, তাদের প্রতিও জানাই পরম কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) শপথগ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে বলেন, সব অপরাধের বিচার হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন উৎসবের মুহূর্তে এই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে একটি অরাজকতা ও ভীতি সৃষ্টি করেছে। প্রচণ্ড নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী সরকার এ সকল প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। আমরা তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনব। বিভিন্ন চেষ্টায় বিভোর হয়ে যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে, তাদেরকে আইনানুগ বিচারের মাধ্যমে শিগগিরই উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। একই কথা দেশের সকল মন্ত্রণালয়, সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য। সর্বত্র অপরাধের বিচার হবে।’
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ও তার সদস্যরা নিজনিজ কর্তব্য পালন করার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে উপভোগ করবেন। দেশকে গৌরবের শীর্ষে নিয়ে যাবেন এবং দেশবাসী দেশবাসীকে এবং জগৎবাসীকে উপভোগ করার সুযোগ করে দেবেন।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘জাতির পক্ষ থেকে প্রত্যেকে নির্ভয়ে আনন্দ চিত্তে নিজ নিজ কর্মস্থলে নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। দেশের সকল মানুষকে আজ স্বাধীন নির্ভয় নিরুদ্রেগ থাকার জন্য নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য আমাদের ছাত্র শহীদরা প্রাণ দিয়েছেন। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার দেশের প্রত্যেকের সরকার। এখানে থাকবে সকলের আকাঙ্খা পূরণের অধিকার। অরাজকতার বিষবাষ্প এখন যেই ছড়াবে, বিজয়ী ছাত্র-জনতাসহ মুক্ত মানুষের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ শক্তি তাকে ব্যর্থ করে দেবে। নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী সরকার দূর হয়ে গেছে। কাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের সুবিচারের মানবাধিকারের নির্ভয়ে মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য সকলের স্বাচ্ছন্দে জীবন ধারণের সুযোগ প্রদানের সচেষ্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ও সহমর্মী পরশ দলমত নির্বিশেষে সবাই উপভোগ করবেন। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদেরকে এই লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করুন।’
‘সারা বিশ্ব অবাক হয়ে বলছে, সাবাস বাংলাদেশ। সাবাস বাংলাদেশের ছাত্রজনতা’ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এই অর্জনটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। আমাদের ছাত্র-জনতার জন্য কিছুই অসম্ভব নয়। আমাদের তরুণরা অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা সেজন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকি সবার জন্য মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি আমাদের বিজয় অবশ্যই হবে। আল্লাহ মহান আল্লাহ আমাদের সহায়ক।