প্রতিষ্ঠার পর ১৩ বছর পেরোলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান সংকট রয়ে গেছে…
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর দেখতে পাই, নানান সংকটে জর্জরিত দক্ষিণবঙ্গের এ বিদ্যাপীঠ। মানণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সেশনজট নিরসন, খেলার মাঠের সংস্কার, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ শুরু করেছি। যখনই যে সমস্যা সামনে আসছে, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান ফোরামে কাজ করতে গিয়ে আমার তা উপলব্ধি হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: অবকাঠামো, একাডেমিক, প্রশাসনিক—সব দিক থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্মার্ট, মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয় করার স্বপ্ন দেখি। শিক্ষা ও গবেষণায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে অনন্য। ক্যাম্পাসে সুসজ্জিত ভবনের পাশাপাশি থাকবে হরেক প্রজাতির গাছপালা; পড়াশোনা, আড্ডা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার উন্মুক্ত পরিবেশ। একটি পরিপূর্ণ ক্যাম্পাসের জন্য যা যা প্রয়োজন, সব করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনা এবং ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে কাজ করে যাব। সেশনজট নিরসনে সব শক্তি প্রয়োগ করব। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি নয়, কাজ করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: অবকাঠামো ও আবাসনসংকট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা। ডিপিপি দ্বিতীয় ফেজের কাজের অগ্রগতি হিসেবে নিজে আহ্বায়ক থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাস্টারপ্ল্যান পাঠিয়েছি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে সব প্রকল্প যেন সময়মতো শেষ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখব। অবকাঠামোগত উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে একাধিক একাডেমিক ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের চেয়ারম্যান, দপ্তরপ্রধান, হল প্রভোস্ট, গণমাধ্যমকর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে কথা বলেছি। সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি। এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে প্রতিষ্ঠানটিকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কী করতে চান?
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: সেশনজট, শ্রেণিকক্ষ, আবাসন ও শিক্ষকসংকট দূর করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত শিক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করতে চাই। যুগ পেরোলেও সমাবর্তন হয়নি। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি সদয় সম্মতি দিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে প্রথমবারের মতো সমাবর্তন হতে যাচ্ছে চলতি বছরেই। শিক্ষার্থীরা যাতে যুগোপযোগী শিক্ষা ও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পায়, সেটি নিশ্চিত করতে চাই। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সংযুক্ত থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এবং নানা জায়গায় কোলাবোরেশন প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করে যাব।
শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাদপীঠ। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে গুণগত মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার বিকল্প নেই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সে লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। আমাদের অনেক শিক্ষক আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা করছেন; দেশি-বিদেশি জার্নালে তা প্রকাশিতও হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হচ্ছে। আউটকাম বেসড কারিকুলামের দিকে আমরা নজর দিয়েছি। বিভিন্ন বিভাগের সিলেবাস-কারিকুলাম পর্যালোচনার মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিখনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
স্মার্ট ক্যাম্পাস বিনির্মাণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কি না।
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া: প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাম্পাস গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে আমরা ডিজিটাল ফাইলিংয়ের কাজ শুরু করেছি। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ক্লাস নেন শিক্ষকেরা। ভর্তি কার্যক্রম, ফরম ফিলাপ, ফি জমাসহ এ ধরনের কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরে বসে অনলাইনে করতে পারে, সে বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য যুগোপযোগী নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমি মনে করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়তে হবে। শিক্ষার্থীরা স্মার্ট, যোগ্য ও দক্ষ হলেই বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে।