স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা বুদ্ধিদীপ্তদের প্রতি মুগ্ধ হন
মানুষ যখন কারও প্রেমে পড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার সৌন্দর্যকেই প্রাধান্য দেয়। তবে সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক বা শারীরিক গঠন বা রূপেই সীমাবদ্ধ থাকে না। একজন মানুষের সৌন্দর্য বুদ্ধিমত্তার ওপর ভিত্তি করেও প্রস্ফুটিত হয়। অর্থাৎ মানুষ কেউ হয়ত একজনের বাহ্যিক রূপ দেখে প্রেমে পড়ে। আবার কারও কাছে শারীরিক সৌন্দর্য ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে একজনের বুদ্ধিমত্তা।
তাদের মস্তিষ্কে প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে। তারা বুদ্ধিদীপ্তদের প্রতি মুগ্ধ হন ও প্রেমে পড়েন। এ ধরনের মানুষদের বলা হয় স্যাপিওসেক্সুয়াল।
আসলে সময়ের সঙ্গে প্রেমের ধরণ বদলেছে। এসেছে নানা পরত। মানুষ এখন কেবল সংসার পাতা বা সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রেম, বিয়ে করে না। অনেকের কাছেই শারীরিক সৌন্দর্য ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে বুদ্ধিমত্তা। যারা একটা মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রেমে পড়েন, তাদেরই ডাকা হয় স্যাপিওসেক্সুয়াল।
তবে একজন মানুষ নিজে অনেক বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হলেই যে সে স্যাপিওসেক্সুয়াল হবে, এমনটি নয়। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারা সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয় সঙ্গীর মহানুভবতাকে এবং তার সাথে নিজের বোঝাপড়াকে। এছাড়া সম্পর্কের অন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: সঙ্গীর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও সঙ্গীর সঙ্গে সহজে মিশতে পারা।
নৃবিজ্ঞানের গবেষক ইপন শামসুল স্যাপিওদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন:
স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা কখনোই হুট করে প্রেমে পড়েন না। যেহেতু শারীরিক সৌন্দর্য তাদের টানে না, তাই প্রেমে পড়তে তাদের সময় লাগে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে বন্ধুত্ব হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ও বৌদ্ধিক সংযোগ হলে তবেই আসে প্রেমের প্রশ্ন।
তবে দুই ধরণের স্যাপিও দেখা যায়। কিছু আছে যারা বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে আকর্ষণ বোধ করেন। অন্যদের কাছে যৌনতা মুখ্য নয়। বরং ওই মানুষটার সঙ্গে বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, রাজনীতি, দর্শন নিয়ে আলোচনা করতেই ভালোবাসেন তারা। এটাকে বলা যায় প্লেটোনিক প্রেম। যেখানে থাকে না যৌনাকাঙ্ক্ষা কিংবা যৌন আকর্ষণ থাকলেও সেটি মুখ্য নয়।
স্যাপিওরা মনে করেন, তাদের প্রেমটাই সেরা। কেননা সময়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ক্লিশে হয়ে আসে, সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, টিকে থাকে কেবল বুদ্ধিমত্তা। তাই বুদ্ধিমত্তাটাই শেষ কথা। আর এটাই প্রেমে পড়ার উপযুক্ত কারণ হওয়া উচিত।
স্যাপিওরা সাধারণত অন্তর্মুখী স্বভাবের হন। আর যার প্রেমে পড়েন, সে সাধারণত তার শিক্ষক, মেন্টর, বস, উচ্চপদস্থ কেউ বা পুরোনো বন্ধু হন। হতে পারেন সহকর্মীও। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনের কথাটা বলে ওঠা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই স্যাপিওদের প্রেম বিবাহবহির্ভূতও হয়। একমুখী (ওয়ান সাইডেডও) হয়। সময়ের সঙ্গে একমুখী প্রেম হারিয়েও যায়।
সঠিক সময়ে, উপযুক্ত পরিবেশে স্যাপিওদের প্রেম হলে সেটা সাধারণত টেকসই হয়।
স্যাপিওদের কাউকে পছন্দ মানে সত্যিই পছন্দ। এর একটা কারণ স্যাপিওদের সহজে কাউকে পছন্দ হয় না, অনেকটা সময় লাগে। উলটোদিকের মানুষটার সঙ্গে মেধা ও বৌদ্ধিকভাবে সংযোগ স্থাপনের পরই আসে তাকে ভালোলাগার প্রশ্ন। ফলে যখন কাউকে তাদের ভালো লাগে, তখন সেটা বেশ সিরিয়াসই হয়।